নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া ::
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তপসিল অনুসরণে আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর অফিস ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিস ভাংচুর করেছে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা। নির্বাচনের শুরুতেই সহিংসতা ও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে। ঘটনার পর দুই প্রার্থীর সমর্থমকদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০জন ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দার কাটা পূর্ব স্টেশন এবং পুচ্ছালিয়া পাড়া স্টেশন এলাকায় পৃথক দুটি হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষের আহতরা হলেন, নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষের বহদ্দার কাটা পূর্ব স্টেশন এলাকার মৃত দুদু মিয়ার ছেলে নুরুল আলম প্রকাশ রাজামিয়া (৫৮), মৃত মোজার আহমদের ছেলে আবুল হোসেন(৪০) ফরুখ আহমদের ছেলে আবুল হাসেম(৫০), সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিন (৩১),মৃত আলী হোসেনের ছেলে আবুশামা , সেলিম উদ্দিনের শিশু ছেলে তুষার (১০), মৃত বদিউজ্জামানের ছেলে জাগের হোসেন (৫৫), ছৈয়দ আহমদের ছেলে শোয়াইবুল ইসলাম (১৯) , । এছাড়ও কমবেশী উভয়পক্ষের ১০-১২জন ব্যক্তি আহত হলে তাৎক্ষনিক ভাবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এসময় নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর প্রচারনার কাজে নিয়োজিত একটি টমটম গাড়ি ও ২টি সিএনজি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী র পক্ষের আহতরা হলেন, ছৈনাম্মা ঘোনার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে শহিদুল মোস্তফা (২২)পুচ্ছালিয়া পাড়ার মোক্তার আহমদের ছেলে মো.ইসমাঈল (২৫),ছৈনাম্মা ঘোনার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে শহিদুল মোস্তফা (২২),
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শুরুতেই ভোটের মাঠে সহিংসতা ও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ ভোটার শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তপসিল মতে প্রাথীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ২নভেম্বর। এরই মধ্যে আ:লীগ মনোনীত প্রার্থী বদিউল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের মাঝে প্রচার-প্রচারণাকালে উচ্চ বাক্য বিনিময়ের জেরে দু’পক্ষের ইটপাটকেল ছুড়াছুড়ি হয়। এতেই দুই প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। ওসময় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী দুইজনের অফিস কমবেশী ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের ২০জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়। নির্বাচন ঘিরে পুরো ইউনিয়নে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর একজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মাতামুহুরী তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের একটি টীম ঘটনার সংবাদ পেয়ে রাতে পূর্ব স্টেশন এলাকায় এসে সকল দোকান-পাঠ বন্ধ করে দেয়। ওইসময় স্টেশনে থাকা লোকজন স্ব স্ব তাদের বাড়িতে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আকস্মিক ভাবে নৌকার প্রাথীর নির্বাচনী অফিসে এসে তান্ডব চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এসময় রাস্তায় থাকা বিভিন্ন গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে পুলিশ ঘটনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় অনেক পথচারী ও নৌকা সমর্থকের নেকা-কর্মীরা আহত হয়েছে। আহতদের চকরিয়া সরকারী হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
নৌকার মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউল আলম বলেন, রাতে ঢাকা থেকে দলীয় নৌকা মনোনয়নের চিঠি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অফিস ভাংচুরের বিষয়টি মুঠোফোনে জানতে ফেরেছি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকার নির্বাচনী অফিসে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর টাঙ্গানো ছবিতে গোবর নিক্ষেপ করে অবমাননা করা হয় । এছাড়াও অফিসের চেয়ার-টেবিল ও পোস্টার-ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়েছে। তবে এই ভাংচুরের পেছনে বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত বলে তিনি দাবী করেছেন।
তিনি আরও বলেন, নৌকার বিজয় নিশ্চিত দেখে জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে রাতের অন্ধকারে এমন গর্হিত কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউল আলম।
অপরদিকে, বিএমচর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ায়ম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিকল্পিত ভাবে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে এসে ভাংচুর চালায়। নৌকার সমর্থকদের ইটপাটকেলে অফিসে থাকা অন্তত ১০-১২ জন লোককে আহত করা হয়েছে। ঘটনার সময় আমি পাশ্বোক্ত ওয়ার্ডে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত ছিলাম।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ইউনিয়নের মানুষকে অশান্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে নৌকার প্রার্থী। পরাজয় জেনে তার কর্মী সমর্থকরা নির্বাচনের শুরুতেই সহিংসতা সৃষ্টি করে। অফিসের হামলার ঘটনায় থানায় ৩২ জনেরর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২শত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আমি এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে সুষ্ট বিচার দাবী জানাই।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, ঘটনার খবর জেনে দ্রুত পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এ বিষয়ে দু’পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত: